Thursday, April 24, 2014

নায়ের মাঝি

নায়ের মাঝি

// বজলুর রশীদ চৌধূরী //
নায়ের মাঝি ছাড়ছ তরী অচীন দেশের গাঁয়,
ফত ফতিয়ে রঙ্গীন বাদাম উড়ছে তোমার নায়।
কোন্ বা দেশে বাড়ী মাঝি-কোন্ বা গাঁয়ে ঘর,
তোমায় দেখে মন হয়-কত আপন মোর।
নায়ের মাঝি সোয়ারী নায়ের মাঝি তুমি-রঙ্গীন তোমার নাও,
পাল তুলিয়া যাও গো মাঝি-ধরে পূবাল বাও।
নায়ে থাক নায়ে ঘুমাও-নায়ে আহার বিহার,
জলের উপর ভাসিয়া বেড়াও-সঙ্গী নাই রে আর।
কত মানুষ পার হয়ে যায়-তোমার নৌকায় বসে,
কত জনা মুগ্ধ হয় ভাটিয়াল সুরের রসে।
কত দূরে যাওরে মাঝি-চোখের নাহি ঠাঁই,
দূরের গাঁয়ে লুকিয়ে গেলে বড়ই ব্যথা পাই।
সারা বছর চেয়ে থাকি বাইষ্যা মাসের আসে,
নৌকা নিয়ে আসছে বাজান-চোখের মাঝে ভাসে।
এই নায়েতে উঠে আমি শ্বশুর বাড়ী আসি,
দুই দিনের পথ ছিলাম আমি জলের উপর ভাসি।
পাল উড়াইয়া যাও গো মাঝি-হাওর নদী বাইয়া,
তোমায় দেখে দিন যায় আমার-বিরহের গান গাইয়া।
তোমার গানের ভাটির সুর আসে আমার কানে,
নিঠুরিয়া ভাইধন আমার আছে কোন্ পরানে।
কত কবি কত বাউল তোমার গান গায়,
কত করি কত বাউল তোমার গান গায়,
কত নারীর অশ্র“ ঝরে নাইওর যাওয়ার আশায়।
আপন মনে যাওরে মাঝি-বিরহের গান গেয়ে,
অভাগিনী বইস্যা রইলাম-বাজানে পথ চেয়ে।
বড় স্বাদ জাগে মাঝি-উঠি তোমার নায়,
তোমার লয়ে যাই গো আমি-আমা-র জনম গাঁয়।
--------------------------------
লেখক-মিশিগান, যুক্তরাষ্ট্র।

Sunday, April 20, 2014

‘অবলা নারী’


বজলুর রশীদ চৌধূরী
নারী মোদের অবলা জাতি-সহজ সরল মন,
নারীর কাছে ভালবাসা-ইহাই বড় ধন।
দুঃখে-কষ্টে থাকে নারী-মুখ নাহি খুলে,
ভালবাসার চাঁদর পরে-সবই যায় ভুলে।
শ্বশুড় বাড়ী যায় কণে-অজানা পথ ধরে,
আদর সোহাগ দিয়ে সেথায়-পরকে আপন করে।
দুঃখ ব্যথা যত পায়-নারীরে যায় সহি,
মুখে নাহি বলে কিছু থাকে রহি রহি।
ফেল ফেলিয়ে তাকায় নারী-অসহায়ের ছাপ,
যত ব্যথা বুকে আছে-কালের অভিশাপ।
বিয়ে ভঙ্গ পোড়া অন্তর-সইতে নাহি পারে,
গন্ড বহি অশ্রু তাহার ঝরে বারে বারে।
বিয়ের খরচ আনে পিতা-ভিটের দলিল দিয়ে,
ভিটে গেল দাগ লাগিল-না হইল বিয়ে।
যৌতুক ভারে পিতা মরে-ভাই ছাড়ে বাড়ী,
তবু নাহি পায় গো সাথী-ব্যার্থ জীবন পাড়ি।
তালাক পাওয়া তাড়া খাওয়া-হর হামেশার খেলা,
পরের ঘরের বুয়া হয়-হায়রে অবহেলা।
তবু নাহি বলে নারী-আপন বুকের কথা,
চোঁখের ভাষায় জানিয়ে দেয়-দিন যাপনের ব্যাথা।
অন্ধকারে রইবে নারী-জানবে না সে কিছু
কু-সংস্কার আর গোঁড়ামী কি হাটবে পিছু পিছু?
নারী নহে গৃহবন্দী-নয় গো খাঁচার পাখি,
নারী গর্ভে জন্ম মোদের-নারীর সাথে থাকি।
নারী আনে নূতন জীবন-নারী দানে বংশ,
নারী গড়ে সোনার সংসার-নারী অর্ধেক অংশ,
কূসংস্কার আর গোঁড়ামী সব যাক-আস্তা কূড়ে,
নারী সমাজ মুক্তি পাক্-সারা বিশ্ব জুড়ে।
লেখক-মিশিগান, যুক্তরাষ্ট্র।

Saturday, April 5, 2014

‘গাঁয়ের চাষী’

বজলুর রশীদ চৌধুরী

গাঁয়ের চাষী ভালবাসি তোমায় বেশী ভাই,
কত কষ্টে আছ মাঠে বলার কেহ নাই।
ভোরের আলো ফুটার আগে-জেগে উঠ তুমি,
তোমার কাছে বেশী প্রিয়-ফসল চাষের ভূমি।
হালের গরু হাকিয়ে চল বীজ বপনের সাধে,
লাঙ্গল-জোয়াল-প্রাজন-কুদাল-আছে তোমার কাঁধে।
ঝড়-তুফান বৃষ্টি বাদল কর নাকো ভয়,
অনাহারে যায় চলে দিন-তোমার গায়ে সয়।
রোদের তাপে জ্বলছে দেহ-মাথার ঘাম ঝরে,
সারা বেলা কর্মে ব্যস্ত-সবুজ মাঠের পরে।
হাড় কাঁপানো মাঘের শীতে কাজ কর জলে,
গ্রীষ্মের ঐ আগুন হাওয়া-তোমার গায়ে গলে।
কূঁড়ে ঘরে থাক তুমি গরুর আথাল পাশে,
ফোঁটায় ফোঁটায় পানি পড়ে বৃষ্টি ঝরা মাসে।
অসুখ-বিসুখ থাকলে তাক আসতে দাওনি কাছে,
ডাক্তার ঔষধ নাই কো তোমার-বন বনাজী আছে।
কচি কচি সবুজ চারা-যোগায় চাষীর বল,
ক্ষেতের ফসল জোড়ায় দেহ-নামে খুশীর ঢল।
মেয়ে বিয়ে দেবে এবার বউকে রঙ্গীন শাড়ী,
নয়া জামা পরে ছেলে-স্কুল দিবে পাড়ি।
ক্ষেতের মাঠে ঘুরে ঘুরে ভাবে গরীব চাষী,
ফোঁটু ছালে পড়বে না মেঘ-মেঝ যাবেনা ভাসি।
স্বপ্ন মোহে থাকে চাষী বুকে রাখে বল,
চূর্ণ করে সকল আশা-অকাল বন্যার জল।
বন্যায় কাড়ে আউষের ফসল-ভাসে নবীন চারা,
শিলায় ভাঙ্গেঁ রবি শষ্য অভাব করে তাড়া।
তবু নাহি থামে কৃষাণ-আবার নামে মাঠে,
ব্যাথায় ভরা হৃদয় নিয়ে-ক্ষেতের ভূমে খাটে।
পুষিয়ে নেয় অতীত ক্ষতি, ঘুচিয়ে তুলে সংসার,
সারা বিশ্বে যোগান দিয়ে যোগায় সবের আহার।
গাঁয়ের চাষী তোমায় আমি বাসি কত ভাল,
তুমি আমার দেশের মান-গ্রাম বাংলার আলো।
মুখে তোমার গাঁয়ের ভাষা-গাঁয়ের আদর স্বভাব,
মাটি খুঁড়ে ফলাও ফসল-মিটাও দেশের অভাব।
বড় সাধ জাগে ভাই-তোমার পাশে থাকি,
তোমায় লয়ে গাঁয়ে সাথে-তোমার ছবি আঁকি।
সালাম জানাই সালাম লও-ওগো গাঁয়ের চাষী,
গাঁয়ের কোলে মরি যেন-তোমায় ভালবাসী।

মিশিগান, যুক্তরাষ্ট্র।